পনের দাবিতে এক গৃহবধূকে গলায় দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ উঠল স্বামী,শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে।
মালদা,২৬ এপ্রিলঃ পনের দাবিতে এক গৃহবধূকে গলায় দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ উঠল স্বামী,শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে, চাঁচোল থানার চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঘাপাড়া এলাকায়। পরিবারের অভিযোগ, গত দুই বছর আগে ওই গৃহবধূর বিয়ে হয়। তিনজনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন গৃহবধূর পরিজনেরা। ঘটনার পর থেকে পলাতক অভিযুক্তরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে মৃত গৃহবধূর নাম, নার্গিস পারভীন(২২)। অভিযুক্ত স্বামী আর্সাদ আলী সহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের চাঁচোল থানায়। জানা গিয়েছে, গত দুই বছর আগে চাঁচোল থানার হজরৎপুরের বাসিন্দা নার্গিসের বিয়ে হয় বাঘাপাড়ার বাসিন্দা আর্সাদ আলীর সাথে। বিয়ের পর থেকেই মাঝে মধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। গত কয়েকদিন আগে অভিযুক্ত স্বামী এক লক্ষ টাকার দাবি করে। টাকা আনতে রাজি না হওয়ায় গৃহ বধূকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযগ ওঠে। ঘটনার পর থেকে পলাতক অভিযুক্তরা পলাতক। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেন মৃতার পরিজনেরা। তবে কি কারনে মৃত্যুর ঘটনা তা তদন্ত শুরু করেছে চাঁচল থানার পুলিশ। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
নদী থেকে পুলিশ কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধারে এলাকায় চাঞ্চল্য
বালুরঘাট নদী থেকে পুলিশ কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধারে এলাকায় চাঞ্চল্য। বালুরঘাট শহরের কালেক্টরেট পাড়া এলাকার ঘটনা। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা আত্রেয়ী নদীতে মৃত দেহ ভাসতে দেখে থানায় খবর দেন। পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। মৃতের নাম বাবুন হেলা(৩৯)। বাড়ি আত্রেয়ী নদীর বাঁধ লাগোয়া কালেক্টরেট পাড়ায়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের বাগডোগরা থানা এলাকায় ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত ছিলেন তিনি। দিন তিনেক আগে ছুটিতে বাড়ি এসেছেন। মঙ্গলবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। বুধবার সকালে আত্রেয়ী নদীর কালেক্টরেট ঘাটে তাঁর মৃতদেহ ভাসতে দেখেন বাসিন্দারা। মৃত্যুর কারণ জানতে বালুরঘাট থানার পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপে শিশুর সমস্যা স্কুলকে জানাবেন অভিভাবক
ফোন নম্বর-সহ অভিভাবকদের নামের তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে। বুধবার থেকে সকলকে মোবাইলে সজাগ থাকতে বলে রেখেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আজ, বুধবার থেকেই শ্যামবাজারের এ ভি স্কুলে অভিভাবকদের নিয়ে চালু হতে চলেছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। স্কুল সূত্রের খবর, গ্রুপে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাড়াও থাকছেন দু’জন মনোরোগের চিকিৎসক এবং এক জন সাহিত্যিক। এক জন পুষ্টিবিদকে যুক্ত করার ভাবনাচিন্তাও চলছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন রপ্তান জানান, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য প্রথম এই গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। সুফল মিললে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্যও এমন গ্রুপ চালু করা হবে। আজ, বুধবার স্কুলে ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা চালুর অনুষ্ঠানে এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথা ঘোষণা হওয়ার কথা। মনোরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘এই গ্রুপে কোনও অভিভাবক সরাসরি ছেলে-মেয়ের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। আমরা গ্রুপেই সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব।’’ মনোরঞ্জনবাবুর মত, ‘‘মনোরোগের চিকিৎসক থাকায় মানসিক ভাবে ছেলে-মেয়েদের সমস্যা হলে, সমাধান জেনে নেওয়া যাবে সহজেই।’’
আগে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়েছিল শহরের বেশ কিছু স্কুলে। সিবিএসই, আইসিএসই বোর্ডের স্কুলেও এই ধরনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ব্যবহার নতুন নয়। তবে বাংলা মাধ্যম কোনও স্কুলে এই উদ্যোগ নতুন। বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে মনোরোগের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘দারুণ উদ্যোগ। একে ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারলে সুফল আসবে। তবে মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক ভাবেই কেবল সমস্যা বুঝে নেওয়া যায় হোয়াটসঅ্যাপে। সবিস্তার চিকিৎসা কিন্তু হবে না।’’
পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরীরও বক্তব্য, ‘‘দারুণ উদ্যোগ। এ ভাবে ভাবা যেতেই পারে। তবে হোয়াটসঅ্যাপের মতো ফোরামে কেউ প্রাথমিক সমস্যা জানাতে পারেন। তবে তার পর ব্যক্তিগত ভাবে পরামর্শ করা প্রয়োজন।’’
তবে আপাতত স্কুলের গ্রুপ নিয়ে অভিভাবকদের উৎসাহের অন্ত নেই। প্রধান শিক্ষক জানালেন, সদস্য হতে চেয়ে ইতিমধ্যেই ৬০০ জন অভিভাবক আবেদন করেছেন। তবে এত জনকে কী করে এক গ্রুপে রাখা যায় তা নিয়েই ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। দু’টি পৃথক গ্রুপে ভাগ করে অভিভাবকদের নেওয়া হতে পারে। এক ছাত্রের মা বললেন, ‘‘আমরা দু’জনেই চাকরি করি। অনেক সময়েই স্কুলে যাওয়া হয় না। শাশু়ড়িই সব করেন। গ্রুপ হলে আমাদের সুবিধাই হবে।’’
ফোন নম্বর-সহ অভিভাবকদের নামের তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে। বুধবার থেকে সকলকে মোবাইলে সজাগ থাকতে বলে রেখেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আজ, বুধবার থেকেই শ্যামবাজারের এ ভি স্কুলে অভিভাবকদের নিয়ে চালু হতে চলেছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। স্কুল সূত্রের খবর, গ্রুপে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাড়াও থাকছেন দু’জন মনোরোগের চিকিৎসক এবং এক জন সাহিত্যিক। এক জন পুষ্টিবিদকে যুক্ত করার ভাবনাচিন্তাও চলছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন রপ্তান জানান, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য প্রথম এই গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। সুফল মিললে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্যও এমন গ্রুপ চালু করা হবে। আজ, বুধবার স্কুলে ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা চালুর অনুষ্ঠানে এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথা ঘোষণা হওয়ার কথা। মনোরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘এই গ্রুপে কোনও অভিভাবক সরাসরি ছেলে-মেয়ের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। আমরা গ্রুপেই সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব।’’ মনোরঞ্জনবাবুর মত, ‘‘মনোরোগের চিকিৎসক থাকায় মানসিক ভাবে ছেলে-মেয়েদের সমস্যা হলে, সমাধান জেনে নেওয়া যাবে সহজেই।’’
আগে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়েছিল শহরের বেশ কিছু স্কুলে। সিবিএসই, আইসিএসই বোর্ডের স্কুলেও এই ধরনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ব্যবহার নতুন নয়। তবে বাংলা মাধ্যম কোনও স্কুলে এই উদ্যোগ নতুন। বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে মনোরোগের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘দারুণ উদ্যোগ। একে ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারলে সুফল আসবে। তবে মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক ভাবেই কেবল সমস্যা বুঝে নেওয়া যায় হোয়াটসঅ্যাপে। সবিস্তার চিকিৎসা কিন্তু হবে না।’’
পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরীরও বক্তব্য, ‘‘দারুণ উদ্যোগ। এ ভাবে ভাবা যেতেই পারে। তবে হোয়াটসঅ্যাপের মতো ফোরামে কেউ প্রাথমিক সমস্যা জানাতে পারেন। তবে তার পর ব্যক্তিগত ভাবে পরামর্শ করা প্রয়োজন।’’
তবে আপাতত স্কুলের গ্রুপ নিয়ে অভিভাবকদের উৎসাহের অন্ত নেই। প্রধান শিক্ষক জানালেন, সদস্য হতে চেয়ে ইতিমধ্যেই ৬০০ জন অভিভাবক আবেদন করেছেন। তবে এত জনকে কী করে এক গ্রুপে রাখা যায় তা নিয়েই ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। দু’টি পৃথক গ্রুপে ভাগ করে অভিভাবকদের নেওয়া হতে পারে। এক ছাত্রের মা বললেন, ‘‘আমরা দু’জনেই চাকরি করি। অনেক সময়েই স্কুলে যাওয়া হয় না। শাশু়ড়িই সব করেন। গ্রুপ হলে আমাদের সুবিধাই হবে।’’
মেয়ে হয়ে রাজনীতি করবে?
বছর পাঁচেক আগে কাগজে একটা খবর বেরিয়েছিল— গ্রামবাংলার এক পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত মহিলা সদস্য স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন। তাঁর অপরাধ, স্বামীকে জলখাবারে রুটির বদলে পান্তাভাত দিয়েছিলেন। পুরনো ব্যথার মতো নতুন করে খবরটা মনের মধ্যে চাগাড় দিয়ে উঠল এপ্রিলের শুরুতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বের কয়েকটি ছবি ও ভিডিয়ো দেখে। ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, কয়েক জন মহিলাকে রাস্তায় মারতে মারতে তাঁদের হাত থেকে কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মেরে হাতের সুখ করছেন কয়েক জন পুরুষ। এত দিন জানতাম বাড়িতে গরম ভাত বেড়ে দেওয়ার জন্য ঠিক সময় হাজির না থাকলে ‘পার্টি’ করা ঘুচে যায় মেয়েদের। স্বামীর হাতে মার খেয়ে মরেও যেতে হতে পারে! দুই দল বা গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে অন্ধকারে বাড়ির আশেপাশে ‘রেপ্ড’ হয়ে যাওয়াটাও নতুন কিছু নয়।
কিন্তু এ বার ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছে মেয়েদের সমানাধিকার বুঝি অবশেষে অর্জিত হল! ছেলেতে মেয়েতে কোনও তফাতই আর থাকছে না। রাস্তার মারামারিতে ছেলেদের যে ভাবে পেটানো হয়, সেই ভাবেই গায়ে হাত পড়ছে মেয়েদের। দিনদুপুরে। মহকুমা বা ব্লক অফিসের ধারেপাশে। উপরন্তু ছেলেদের যা করা যায় না, মেয়েদের তা-ই করার চেষ্টা হচ্ছে, অর্থাৎ কিনা কাপড় ধরে মারো টান, মেয়ে হবে খানখান!
সমানাধিকারের এই মাইলফলকে পৌঁছে দেখছি, ছেলেদের মতো মেয়েরা কিন্তু পাল্টা মার দিচ্ছে না! পুরুষদের গায়ে হাত তোলার ট্রেনিং নেই যে! নিজেদের আব্রু বাঁচিয়ে হাতের কাগজটা ছাড়াবার চেষ্টা করছে। পাল্টা মারার ক্ষীণ চেষ্টা করতে গিয়ে যদি গায়ের শাড়ি সরে যায়, তবে সে লজ্জা রাখবে কোথায়
মার্চ মাসে দিল্লির রাজপথেও দেখলাম জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মিছিলে ছাত্রীদের গায়ের জামা টেনে ছিঁড়ে বেআব্রু করে দেওয়া হচ্ছে! ‘কাপড়া ফোড়’ হাঁক দিচ্ছে রাষ্ট্রের আজ্ঞাবাহী মহিলা পুলিশ! আর মেয়েদের সেই অপ্রস্তুত মুহূর্তের ছবি ছড়িয়ে পড়ছে ইন্টারনেটে! মেয়ে-পুলিশ কয়েকটা ডেঁপো ছাত্রীর জামা ছিঁড়েছে— এ নিয়ে আবার কথা কিসের? ধর্ষণ তো আর করেনি! আর মেয়েগুলো সব পলিটিক্স করে, ওরা তো সাংবাদিক নয়, কেউকেটা সমাজকর্মীও নয়! তাই ওদের এই ভাবে খুল্লমখুল্লা দিলেও কোনও হইচই হবে না।
পঞ্চায়েতের ভোটেও যে সব মেয়ে দাঁড়ান, তাঁদের বেশির ভাগেরই ক্ষমতা কতটুকু, সবার জানা আছে! অতি কষ্টে বাচ্চা কোলে নিয়ে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন বড়জোর! এখন মাথার ঘোমটা ফেলে রাস্তায় বেরিয়ে ভোট চাইছেন, মিটিং-মিছিল করছেন!
আর, ছেলেদের মতো রাজনীতি করলে, ছেলেদের মতো মারও খেতে হবে না কি? আমরা কি এখনও সেই ১৯২০-২১-এ পড়ে আছি, যখন মিছিল বা পিকেটিং-এর সামনের সারিতে থাকতেন বাসন্তী দেবী-উর্মিলা দেবীদের মতো দু’চার জন সম্ভ্রান্ত মহিলা আর তাঁদের পুলিশ গ্রেফতার করলে গোটা দেশ উত্তাল হয়ে যেত! তখন মেয়েদের মধ্যে ক’জনই বা করতেন রাজনীতি! করলেও তো ‘মার্জিত’ ও ‘নারীসুলভ’ ভঙ্গি থেকে এক চুল এ দিক ও দিক হলে তাঁদের নামে ‘বাজারের মেয়েমানুষ’ বলে কুৎসা রটাতে বাকি রাখত না কেউ! ভোটে দাঁড়াবার তো প্রশ্নই নেই, ভোটাধিকারই ছিল না মেয়েদের!
বিলেতের মেয়েরাই ভোট দেওয়ার অধিকার লাভ করেছে ঠিক একশো বছর আগে। তাও আবার তাদের নামে কিছু সম্পত্তি থাকলে! আমাদের বাংলায় কামিনী রায়, মৃণালিনী সেন ও কুমুদিনী বসুর মতো নেত্রী যখন ১৯২০-২১ সালে মেয়েদের ভোটের জন্য জোট বাঁধলেন, তখন প্রাদেশিক আইনসভায় বিধায়করা প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজনীতিতে প্রবেশ করলে মেয়েদের লজ্জাশরমের আর কিছু বাকি থাকবে কি না! পাঁচ বছর অনেক চাপানউতোরের পর ১৯২৫ সালে বাংলার মেয়েরা পেলেন আংশিক ভোটাধিকার— বিবাহিত, শিক্ষিত এবং সম্পত্তির মালিক হলে তবেই! মুষ্টিমেয় সুশীলাদের ছাড় দিয়ে বাকিদের আটকাতে আইনসভার সদস্যরা সচেষ্ট ছিলেন ষোলো আনা। এ কি আর এখনকার কাল, যে মুড়িমিছরি এক দর! আঠারো না হতেই ভোট দিতে পারবে যে কেউ!
‘নারীসুলভ’ রাজনীতির ছক ভাঙা বোধ হয় প্রথম ঘটেছিল বাংলার বিপ্লবী মেয়েদের হাতে। তিরিশের দশক থেকে মেয়েরা বাড়ি ছেড়ে গোপন ডেরায় বা প্রকাশ্য রাজপথে স্লোগান দিতে দিতে রাজনীতি করার ধরন বদলালেন আর চল্লিশের দশকের শেষে আমরা দেখলাম সমাজের নানা স্তরের অনেক বেশি মেয়ে পথে নামছেন রাজনীতি করতে। সংবিধান তৈরির সময়ে একটা কথা চালু ছিল— স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশের মেয়েরা মন-প্রাণ ঢেলে অংশগ্রহণ করে স্বাধীন ভারতে সমান অধিকার অর্জন করে নিয়েছেন। কেউ তাঁদের হাতে মোয়া তুলে দেয়নি।
‘এগিয়ে থাকা’ ও ‘পিছিয়ে পড়া’ মেয়েদের ক্ষমতায়নের পার্থক্যটা সুস্পষ্ট হল সত্তর-আশির দশকে, রাষ্ট্র সাংবিধানিক সংশোধনী এনে পঞ্চায়েত আর পুরসভায় ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করল মেয়েদের জন্য। তারও পরে পঞ্চায়েত ভোটে ৫০ শতাংশ আসনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেলেন আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মতো কোনও কোনও রাজ্যের মেয়েরা!
এখন প্রশ্ন, রাষ্ট্র কী চায়। যে মেয়েরা ভোর থাকতে উঠে, রান্না সেরে, হেঁটে বা মেশিন ভ্যানে চেপে পঞ্চায়েত-বিডিও অফিস যাতায়াত করছেন বা নির্বাচনী প্রচারে পথে নামছেন, তাঁরা কি প্রাণ ও মান হাতে নিয়ে রাজনীতি করবেন, না ঘরের দুয়ার এঁটে গেরস্থালি সামলাবেন? নির্বাচন কমিশনের মতো রাষ্ট্রযন্ত্র মুখ ফিরিয়ে থাকবে, কোনও রকম সদর্থক পদক্ষেপ করবে না, যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় মেয়েদের অংশগ্রহণ একটু স্বচ্ছন্দ হয়! আর যে মেয়েরা প্রতিবাদ করবে, মিছিলের মুখ হবে, শহরের রাস্তায় তাদের শায়েস্তা করা হবে বুকের জামা সরিয়ে দিয়ে? কেউ যৌন হেনস্থার অভিযোগও জানাতে পারবে না, কারণ কাজটা করেছে মহিলা-পুলিশ। সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না!
এর পরের ধাপগুলো তবে কী? যে মেয়েরা লম্বা হাতা জামা পরে, শাড়িতে পিন লাগিয়ে ও মাথায় ঘোমটা দিয়ে, নিজস্ব যানবাহনে চলাফেরা করার ক্ষমতা রাখবেন, রাজনীতি করবেন শুধু তাঁরাই? ভয় হয়, উল্টো দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমরা না আবার আংশিক ও বৈষম্যমূলক ভোটাধিকারে ফিরে যাই।
বছর পাঁচেক আগে কাগজে একটা খবর বেরিয়েছিল— গ্রামবাংলার এক পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত মহিলা সদস্য স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন। তাঁর অপরাধ, স্বামীকে জলখাবারে রুটির বদলে পান্তাভাত দিয়েছিলেন। পুরনো ব্যথার মতো নতুন করে খবরটা মনের মধ্যে চাগাড় দিয়ে উঠল এপ্রিলের শুরুতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বের কয়েকটি ছবি ও ভিডিয়ো দেখে। ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, কয়েক জন মহিলাকে রাস্তায় মারতে মারতে তাঁদের হাত থেকে কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মেরে হাতের সুখ করছেন কয়েক জন পুরুষ। এত দিন জানতাম বাড়িতে গরম ভাত বেড়ে দেওয়ার জন্য ঠিক সময় হাজির না থাকলে ‘পার্টি’ করা ঘুচে যায় মেয়েদের। স্বামীর হাতে মার খেয়ে মরেও যেতে হতে পারে! দুই দল বা গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে অন্ধকারে বাড়ির আশেপাশে ‘রেপ্ড’ হয়ে যাওয়াটাও নতুন কিছু নয়।
কিন্তু এ বার ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছে মেয়েদের সমানাধিকার বুঝি অবশেষে অর্জিত হল! ছেলেতে মেয়েতে কোনও তফাতই আর থাকছে না। রাস্তার মারামারিতে ছেলেদের যে ভাবে পেটানো হয়, সেই ভাবেই গায়ে হাত পড়ছে মেয়েদের। দিনদুপুরে। মহকুমা বা ব্লক অফিসের ধারেপাশে। উপরন্তু ছেলেদের যা করা যায় না, মেয়েদের তা-ই করার চেষ্টা হচ্ছে, অর্থাৎ কিনা কাপড় ধরে মারো টান, মেয়ে হবে খানখান!
সমানাধিকারের এই মাইলফলকে পৌঁছে দেখছি, ছেলেদের মতো মেয়েরা কিন্তু পাল্টা মার দিচ্ছে না! পুরুষদের গায়ে হাত তোলার ট্রেনিং নেই যে! নিজেদের আব্রু বাঁচিয়ে হাতের কাগজটা ছাড়াবার চেষ্টা করছে। পাল্টা মারার ক্ষীণ চেষ্টা করতে গিয়ে যদি গায়ের শাড়ি সরে যায়, তবে সে লজ্জা রাখবে কোথায়
মার্চ মাসে দিল্লির রাজপথেও দেখলাম জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মিছিলে ছাত্রীদের গায়ের জামা টেনে ছিঁড়ে বেআব্রু করে দেওয়া হচ্ছে! ‘কাপড়া ফোড়’ হাঁক দিচ্ছে রাষ্ট্রের আজ্ঞাবাহী মহিলা পুলিশ! আর মেয়েদের সেই অপ্রস্তুত মুহূর্তের ছবি ছড়িয়ে পড়ছে ইন্টারনেটে! মেয়ে-পুলিশ কয়েকটা ডেঁপো ছাত্রীর জামা ছিঁড়েছে— এ নিয়ে আবার কথা কিসের? ধর্ষণ তো আর করেনি! আর মেয়েগুলো সব পলিটিক্স করে, ওরা তো সাংবাদিক নয়, কেউকেটা সমাজকর্মীও নয়! তাই ওদের এই ভাবে খুল্লমখুল্লা দিলেও কোনও হইচই হবে না।
পঞ্চায়েতের ভোটেও যে সব মেয়ে দাঁড়ান, তাঁদের বেশির ভাগেরই ক্ষমতা কতটুকু, সবার জানা আছে! অতি কষ্টে বাচ্চা কোলে নিয়ে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন বড়জোর! এখন মাথার ঘোমটা ফেলে রাস্তায় বেরিয়ে ভোট চাইছেন, মিটিং-মিছিল করছেন!
আর, ছেলেদের মতো রাজনীতি করলে, ছেলেদের মতো মারও খেতে হবে না কি? আমরা কি এখনও সেই ১৯২০-২১-এ পড়ে আছি, যখন মিছিল বা পিকেটিং-এর সামনের সারিতে থাকতেন বাসন্তী দেবী-উর্মিলা দেবীদের মতো দু’চার জন সম্ভ্রান্ত মহিলা আর তাঁদের পুলিশ গ্রেফতার করলে গোটা দেশ উত্তাল হয়ে যেত! তখন মেয়েদের মধ্যে ক’জনই বা করতেন রাজনীতি! করলেও তো ‘মার্জিত’ ও ‘নারীসুলভ’ ভঙ্গি থেকে এক চুল এ দিক ও দিক হলে তাঁদের নামে ‘বাজারের মেয়েমানুষ’ বলে কুৎসা রটাতে বাকি রাখত না কেউ! ভোটে দাঁড়াবার তো প্রশ্নই নেই, ভোটাধিকারই ছিল না মেয়েদের!
বিলেতের মেয়েরাই ভোট দেওয়ার অধিকার লাভ করেছে ঠিক একশো বছর আগে। তাও আবার তাদের নামে কিছু সম্পত্তি থাকলে! আমাদের বাংলায় কামিনী রায়, মৃণালিনী সেন ও কুমুদিনী বসুর মতো নেত্রী যখন ১৯২০-২১ সালে মেয়েদের ভোটের জন্য জোট বাঁধলেন, তখন প্রাদেশিক আইনসভায় বিধায়করা প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজনীতিতে প্রবেশ করলে মেয়েদের লজ্জাশরমের আর কিছু বাকি থাকবে কি না! পাঁচ বছর অনেক চাপানউতোরের পর ১৯২৫ সালে বাংলার মেয়েরা পেলেন আংশিক ভোটাধিকার— বিবাহিত, শিক্ষিত এবং সম্পত্তির মালিক হলে তবেই! মুষ্টিমেয় সুশীলাদের ছাড় দিয়ে বাকিদের আটকাতে আইনসভার সদস্যরা সচেষ্ট ছিলেন ষোলো আনা। এ কি আর এখনকার কাল, যে মুড়িমিছরি এক দর! আঠারো না হতেই ভোট দিতে পারবে যে কেউ!
‘নারীসুলভ’ রাজনীতির ছক ভাঙা বোধ হয় প্রথম ঘটেছিল বাংলার বিপ্লবী মেয়েদের হাতে। তিরিশের দশক থেকে মেয়েরা বাড়ি ছেড়ে গোপন ডেরায় বা প্রকাশ্য রাজপথে স্লোগান দিতে দিতে রাজনীতি করার ধরন বদলালেন আর চল্লিশের দশকের শেষে আমরা দেখলাম সমাজের নানা স্তরের অনেক বেশি মেয়ে পথে নামছেন রাজনীতি করতে। সংবিধান তৈরির সময়ে একটা কথা চালু ছিল— স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশের মেয়েরা মন-প্রাণ ঢেলে অংশগ্রহণ করে স্বাধীন ভারতে সমান অধিকার অর্জন করে নিয়েছেন। কেউ তাঁদের হাতে মোয়া তুলে দেয়নি।
‘এগিয়ে থাকা’ ও ‘পিছিয়ে পড়া’ মেয়েদের ক্ষমতায়নের পার্থক্যটা সুস্পষ্ট হল সত্তর-আশির দশকে, রাষ্ট্র সাংবিধানিক সংশোধনী এনে পঞ্চায়েত আর পুরসভায় ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করল মেয়েদের জন্য। তারও পরে পঞ্চায়েত ভোটে ৫০ শতাংশ আসনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেলেন আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মতো কোনও কোনও রাজ্যের মেয়েরা!
এখন প্রশ্ন, রাষ্ট্র কী চায়। যে মেয়েরা ভোর থাকতে উঠে, রান্না সেরে, হেঁটে বা মেশিন ভ্যানে চেপে পঞ্চায়েত-বিডিও অফিস যাতায়াত করছেন বা নির্বাচনী প্রচারে পথে নামছেন, তাঁরা কি প্রাণ ও মান হাতে নিয়ে রাজনীতি করবেন, না ঘরের দুয়ার এঁটে গেরস্থালি সামলাবেন? নির্বাচন কমিশনের মতো রাষ্ট্রযন্ত্র মুখ ফিরিয়ে থাকবে, কোনও রকম সদর্থক পদক্ষেপ করবে না, যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় মেয়েদের অংশগ্রহণ একটু স্বচ্ছন্দ হয়! আর যে মেয়েরা প্রতিবাদ করবে, মিছিলের মুখ হবে, শহরের রাস্তায় তাদের শায়েস্তা করা হবে বুকের জামা সরিয়ে দিয়ে? কেউ যৌন হেনস্থার অভিযোগও জানাতে পারবে না, কারণ কাজটা করেছে মহিলা-পুলিশ। সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না!
এর পরের ধাপগুলো তবে কী? যে মেয়েরা লম্বা হাতা জামা পরে, শাড়িতে পিন লাগিয়ে ও মাথায় ঘোমটা দিয়ে, নিজস্ব যানবাহনে চলাফেরা করার ক্ষমতা রাখবেন, রাজনীতি করবেন শুধু তাঁরাই? ভয় হয়, উল্টো দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমরা না আবার আংশিক ও বৈষম্যমূলক ভোটাধিকারে ফিরে যাই।
মনোনয়ন নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেও কেন প্রত্যাহার, অবাক যুক্তি কমিশনের
মনোনয়ন পেশের দিন বাড়িয়ে দিয়েও পিছিয়ে এসেছিল কমিশন। কেন এমন পদক্ষেপ করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন, ব্যাখ্যা দেওয়া হল আদালতে।

কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সওয়াল। নিজস্ব চিত্র/শাটারস্টক
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে গণ্ডগোলের শুরু যে বিজ্ঞপ্তি নিয়ে, তা কেন জারি করেও প্রত্যাহার করে নিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন? কলকাতা হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে যুক্তি দিলেন কমিশনের সচিব।
সচিব নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য আদালতে জানান, কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেই কমিশন মনোনয়নের সময় বাড়িয়েও সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়।
এর আগে বিচারপতি কমিশনের সচিবের কাছে জানতে চান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কী কী করেছে?
তার উত্তরে নীলাঞ্জন বলেন, কমিশন নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ করেছে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরে কয়েকটি বৈঠক হয়। কমিশনে যতগুলি অভিযোগ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জমা পড়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর সেগুলি খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এরপর কমিশন মনোনয়নের মেয়াদ বাড়ায়। পরে তা প্রত্যাহার করে।
এই বিষয়ে অন্যান্য খবর
কমিশনের আর্জি ছিল, সামনেই বর্ষাকাল এবং রমজান মাস থাকবে। তাই তখন ভোট হলে সমস্যা হবে। আদালত যেন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে।
পঞ্চায়েত মামলায় বৃহস্পতিবার শুনানি শুরু হওয়ার পরে বামেদের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য দাবি করেন, মনোনয়ন পেশে একদিনের মেয়াদ বৃদ্ধি হয়েছিল পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছিল বলেই। কমিশন তাই মেয়াদ বাড়িয়েছিল। রাজ্য নির্বাচন কমিশন হল একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেটা আদৌ মানা হচ্ছে না। কমিশনের কাজ হল প্রত্যেক প্রার্থী যাতে মনোনয়ন দিতে পারে, সেটা সুনিশ্চিত করা। কমিশন কখনও বলতে পারে না, সে অসহায়। কমিশনের কর্তব্য হল, সাধারণ মানুষের অধিকারকে সমর্থন করা।
বিজেপি-র তরফে প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২০১৩ সালে ৩ বার ভোটের তারিখ প্রত্যাহার হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৫ দফায় নির্বাচন হয়।
শুনানি এখনও চলছে। সব পক্ষের বক্তব্য শুনেই পঞ্চায়েত মামলার ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার
Comments
Post a Comment